Argentina for Bangladesh

আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি: সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকা

আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি নিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দেশ, যার দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় রয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা সর্বকালের সেরা আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তিদের একটি তালিকা সংকলন করেছি।

শীর্ষ ২০ আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

দিয়েগো মারাদোনা

দিয়েগো মারাদোনা আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(১৯৭৬-১৯৯৭) ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচিত। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দেন, যেখানে “ঈশ্বরের হাত” এবং “শতাব্দীর সেরা গোল” দিয়ে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। ক্লাব পর্যায়ে বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা এবং বিশেষ করে নাপোলিতে দুর্দান্ত খেলেছেন, যেখানে তিনি দুটি সেরি আ, একটি ইতালিয়ান কাপ এবং একটি উয়েফা কাপ জিতেছিলেন।

লিওনেল মেসি

লিওনেল মেসি আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(২০০৪-বর্তমান) আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও অ্যাসিস্টদাতা। ২০২১ কোপা আমেরিকা এবং ২০২২ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বার্সেলোনার হয়ে ১০টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন। আটবার ব্যালন ডি’অর জয়ী, এছাড়া পিএসজি ও বর্তমানে ইন্টার মিয়ামিতে খেলছেন।

আলফ্রেডো দি স্তেফানো

আলফ্রেডো দি স্তেফানো আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(১৯৪৫-১৯৬৬) সর্বকালের অন্যতম সেরা আর্জেন্টাইন ফুটবলার। রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি, যেখানে তিনি পরপর পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছেন। রিভার প্লেট ও মিলিয়নারিওসে খেলার পর স্পেনে যান। যদিও আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ খেলেননি, ১৯৪৭ কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন।

মারিও কেম্পেস

মারিও কেম্পেস

(১৯৭০-১৯৯৬) ১৯৭৮ বিশ্বকাপের নায়ক, যেখানে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হন। ক্লাব পর্যায়ে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে দুর্দান্ত খেলেন, যেখানে তিনি দুটি পিচিচি ট্রফি এবং একটি ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ জেতেন। রিভার প্লেট ও রোসারিও সেন্ট্রালেও খেলেছেন।

হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে

হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে

(১৯৯৬-২০১৫) ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লেমেকার। বোকা জুনিয়র্সের কিংবদন্তি, যেখানে তিনি তিনটি কোপা লিবার্তাদোরেস এবং ২০০০ সালের আন্তঃমহাদেশীয় কাপ জেতেন। ইউরোপে ভিয়ারিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে নিয়ে যান।

ড্যানিয়েল পাসারেলা

ড্যানিয়েল পাসারেলা

(১৯৭৪-১৯৮৯) একমাত্র আর্জেন্টাইন ফুটবলার যিনি দুটি বিশ্বকাপ (১৯৭৮ ও ১৯৮৬) জিতেছেন। দুর্দান্ত ডিফেন্ডার এবং দুর্দান্ত গোলদাতা। রিভার প্লেটের অধিনায়ক ছিলেন এবং ফিওরেন্টিনাতেও সফল ছিলেন।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা

(১৯৮৮-২০০৫) বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা (১০ গোল)। ফিওরেন্টিনার কিংবদন্তি এবং রোমার হয়ে সেরি আ চ্যাম্পিয়ন। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৩ কোপা আমেরিকা এবং ১৯৯২ ফিফা কনফেডারেশনস কাপ জেতেন।

ওমর সিভোরি

ওমর সিভোরি

(১৯৫৪-১৯৬৯) প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড, যিনি ১৯৬১ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। রিভার প্লেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর জুভেন্টাসে চলে যান, যেখানে তিনি তিনটি সেরি আ জিতেছেন। পরে ইতালির জাতীয় দলের হয়ে খেলেন।

আঙ্গেল লাব্রুনা

আঙ্গেল লাব্রুনা

(১৯৩৯-১৯৫৯) রিভার প্লেটের কিংবদন্তি এবং “লা মাকিনা” দলের সদস্য, যা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল। রিভারের হয়ে ৯টি লিগ শিরোপা জিতেছেন এবং আর্জেন্টাইন লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

উবালদো ফিলোল

উবালদো ফিলোল আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(১৯৬৯-১৯৯১) আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রিভার প্লেট, রেসিং ক্লাব এবং ফ্ল্যামেঙ্গোতে দুর্দান্ত ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন।

রিকার্ডো বোচিনি

রিকার্ডো বোচিনি আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(১৯৭২-১৯৯১) ইন্ডিপেন্ডিয়েন্টের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। ৭০ ও ৮০ দশকে দলকে আধিপত্য বিস্তার করতে সাহায্য করেন। পাঁচটি কোপা লিবার্তাদোরেস এবং দুটি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ জিতেছেন। মারাদোনার অন্যতম অনুপ্রেরণা।

কার্লোস তেভেজ

কার্লোস তেভেজ

(২০০১-২০২১) দক্ষ ও লড়াকু ফরোয়ার্ড, যিনি বোকা জুনিয়র্স, করিন্থিয়ানস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি এবং জুভেন্টাসের হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন। ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ২০০৪ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন।

জাভিয়ের জানেত্তি

জাভিয়ের জানেত্তি

(১৯৯৩-২০১৪) অসাধারণ শারীরিক সক্ষমতা ও কৌশলগত শৃঙ্খলাবদ্ধ ডিফেন্ডার। ইন্টার মিলানের অধিনায়ক, যেখানে তিনি ৫টি লিগ ও ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। ১৪০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।

ক্লাউদিও কানিজ্জিয়া

ক্লাউদিও কানিজ্জিয়া

(১৯৮৫-২০০৪) গতিময় ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের খেলোয়াড়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দেন। রিভার, বোকা, আতালান্তা, রোমা ও ডান্ডিতে খেলেছেন।

রবার্তো পারফুমো

রবার্তো পারফুমো

(১৯৬৪-১৯৭৮) আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। রেসিং ক্লাবের হয়ে ১৯৬৭ সালে কোপা লিবার্তাদোরেস ও আন্তঃমহাদেশীয় কাপ জিতেছেন। রিভার প্লেটের হয়েও বহু লিগ শিরোপা জিতেছেন।

হোসে ম্যানুয়েল মোরেনো

হোসে ম্যানুয়েল মোরেনো

(১৯৩৫-১৯৬১) রিভার প্লেটের “লা মাকিনা” দলের অন্যতম তারকা। তিনবার কোপা আমেরিকা জিতেছেন এবং বিভিন্ন দেশে খেলে নিজের প্রতিভা ছড়িয়েছেন।

লিওপোলদো লুকে

লিওপোলদো লুকে

(১৯৬৯-১৯৮৪) ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ৪ গোল করে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রিভার প্লেটের হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন।

সের্জিও আগুয়েরো

সের্জিও আগুয়েরো

(২০০৩-২০২১) ম্যানচেস্টার সিটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড হিসেবে বিবেচিত। ২০২১ কোপা আমেরিকা জয়ী।

আমাদেও কারিজো

আমাদেও কারিজো আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

(১৯৪৫-১৯৭০) আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। আধুনিক গোলকিপিংয়ের পথিকৃৎ। রিভার প্লেটের কিংবদন্তি, ৭টি লিগ শিরোপা জিতেছেন।

এস্তেবান কাম্বিয়াসো

এস্তেবান কাম্বিয়াসো

(১৯৯৮-২০১৭) দক্ষ ও কৌশলগত মিডফিল্ডার। ইন্টার মিলানের হয়ে ৫টি লিগ শিরোপা এবং ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন।

অন্যান্য আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি

যদি আমরা আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের তালিকা সম্প্রসারণ করি, তবে আমরা নিম্নলিখিত নামগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি: ফার্নান্দো রেদোন্দো, হারনান ক্রেসপো, পাবলো আইমার, অস্কার রুগেরি, লুইস আরতিমে, নর্বের্তো মেন্দেজ, দিয়েগো সিমেওনে, আনহেল দি মারিয়া, রোবের্তো আয়ালা, হুস্তো ভিয়ার, উগো গাত্তি, রেনে হাউসমান, গুস্তাভো লোপেজ, মাওরো ইকার্দি, হাভিয়ের মাসচেরানো, এমিলিয়ানো মার্টিনেস, সেবাস্তিয়ান ভেরোন, গনসালো ইগুয়াইন, লুকাস বিগলিয়া, মার্তিন ডেমিচেলিস, জোর্হে বুরুচাগা, দিয়েগো মিলিতো, লিসান্দ্রো লোপেজ, নিকোলাস ওতামেন্দি, লাউতারো মার্টিনেস, এনজো ফের্নান্দেস, আলেহান্দ্রো গার্নাচো, রামোন দিয়াজ, ওরেস্তেস করবাত্তো, হোসে লুইস ব্রাউন, আলবের্তো তারান্তিনি এবং মারিও বোলাত্তি।

উপসংহার

আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি শুধুমাত্র আর্জেন্টাইন ফুটবলের ইতিহাসেই নয়, বরং বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্তের হৃদয়েও স্থায়ী স্থান অর্জন করেছে।